কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের গৃহবধূ লিপিরানী (৩০)। লিপিরানী শারিরীক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ১৩ বছর আগে ক্ষুদ্রকৃষক সুশান্ত সরকারের সাথে তার বিয়ে হয়। প্রতিবন্ধীতার কারনে লিপিরানীর বাবা ইংরেশ্বর সিকদার নতুন জামাই সুশান্তকে ছোট-খাটো ব্যবসার জন্য ৩০ হাজার টাকা প্রদান করে। এ টাকা দিয়ে গ্রামের মধ্যে তেমন কোন ব্যবসা করতে পারেনি সুশান্ত। এদিকে বিয়ে পরবর্তী খরচ মেটাতে টাকাটাও শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হত লিপিরানীকে। এভাবে চলা তাদের সংসারে আসে ক্রমান্বয়ে দুই মেয়ে। দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই দম্পতি। ধীরে ধীরে তাদের মেয়ে বড় হতে থাকে। অভাব অনটনের সংসারে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করা দূরের কথা, দু'বেলা খাবার জোগানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ২০১১ সনে লিপিরানী নীলগঞ্জ এলাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পরিচালিত পিএইচআরপিবিডি প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের আশার আলো স্ব-সংগঠনে সদস্য হয়। এই সংগঠনের মাধ্যমে সে সিডিডিতে অধিকার ও নেতৃত্বের উপর ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ পায়। এরপর আর লিপিরানী রিজেকে আড়ালে গুটিয়ে না রেখে সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত হতে থাকে। তার বাচনভঙ্গি, নিজেকে উপস্থাপন করার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়। তার সবকিছুই পাল্টে যেতে শুরু করে। আশার আলো স্ব-সংগঠনের কমিটির তাদের সদস্যদের নানা রকমের সুবিধা পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে পরিকল্পনা করে কর্মকান্ড গ্রহন করে। এর আওতায় এবং এই কমিটির সহায়তায় লিপিরানী ২০১২ সনে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একমাসের সেলাই প্রশিক্ষণ পায় এবং কিছুদিনের মধ্যে একটি সেলাই মেশিন পায়। এখন তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। বর্তমানে স্থানীয়দের বিভিন্ন পোশাক তৈরির ফরমায়েশ নিতে ব্যস্ত তিনি। আর এ কাজ করে প্রতিদিন তার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। তার স্বামী শুপান্ত কৃষি শ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন পরিশ্রম করে পান ১৫০-২০০ টাকা। স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে ভালভাবে চলছে তাদের সংসার। এখন আমার সংসারে কোন অভাব নেই। এক মেয়ে স্কুলে পড়ালেখা করছে।