পাথরঘাটা পৌরসভা নিবাসী জীবন কর্মকারের ১ মেয়ে ও ২ ছেলে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবার বড় রিনা রানী কর্মকার। বৃদ্ধ পিতার স্বল্প আয় দ্বারা ০৫ সদস্যের সংসার অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার ৩ জনের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তার। রিনা রানী বিদ্যালয় থেকে এসে বিকালে বাবার সাথে দোকানে বসতেন এবং হিসাব নিকাশসহ নানা কাজে বাবাকে সহযোগিতা করতেন। এরই পাশাপাশি কর্মকারের যাবতীয় কাজ তার আয়ত্বে চলে আসে। আজ থেকে ২২ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ার পরে লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পেরে বাবা তাকে বরগুনার গৌরীচন্না নিবাসী শংকর কর্মকারের সাথে বিবাহ দেন। বিবাহের পরে ০৫ বছর পর্যন্ত তারা ( রিনারানী ও তার স্বামী শংকর কর্মকার ) জীবন কর্মকারের দোকানে কাজ করতে থাকেন। এরপরে ২০০০ সালে সংগ্রাম পাথরঘাটা শাখার বড় পাথরঘাটা মহিলা সমিতিতে সদস্য হিসেবে ভর্তি হয়ে ৩০০০/- (তিন হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে এবং পাশাপাশি ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার কারখানায় উৎপাদিত দা, বটি, কুঠার, কোদাল, খোন্তা ও কৃষি যন্ত্রপাতির গুনগত মান অন্য সকলের চেয়ে অনেক ভাল হওয়ায় তার ক্রমন্বয়ে তার ক্রেতা বাড়তে থাকে। পাথরঘাট মৎস বন্দর হওয়ায় শত শত ট্রলারে নোঙ্গরের চাহিদা দেখা দেয়। তখন রিনা রানী খুচরা মালামালের পাশাপাশি নোঙ্গর তৈরীর প্রতি নজর দেন এবং সংগ্রাম থেকে ৩০০০০০/- টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিধি আরও বাড়িয়ে ফেলে। তিনি পাথরঘাটা মৎস আহরনকারী সিংহভাগ ট্রলারের নোঙ্গরের চাহিদা পুলন করতে থাকেন এবং এক পর্যায় পুরো মার্কেট একার দখলে চলে আসে । বর্তমানে তিনি সংগ্রাম হতে ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। তার দেখাদেখি আরও কয়েকটি কামারের দোকান তৈরী হয়েছে। নোঙ্গর তৈীর পাশাপাশি তিনি ৬০,০০,০০০/- (ষাট লক্ষ) টাকা ব্যয় করে দুইটি মাছ ধরার ট্রলার তৈরী করেছেন। প্রতি সিজনে খরচ বাদে উক্ত ট্রলার হতে ১২/১৫ লক্ষ টাকা আয় হয়। রিনা রানীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ে তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমীর ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী। এক ছেলে ৩য় শ্রেনীতে পড়াশুনা করে এবং ছোট ছেলের বয়স ৬ মাস। তিনি প্রথম থেকেই অত্যন্ত জীর্নশীর্ণ গৃহে অতি কষ্টে বসবাস করতেন। অর্জিত আয় থেকে ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকায় পাথরঘাটা পৌরসভায় তিনি ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন এবং চলতি বছর উক্ত জমিতে ৩ (তিন) তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে বিল্ডিং তৈরীর কাজ শুরু করেছেন এবং এতে ইতোমধ্যে প্রায় ১৫,০০,০০০ (পনের লক্ষ) টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার চিন্তা ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনার পাশাপাশি লভ্যাংশের আংশিক টাকা দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবনের কাজ সম্পন্ন করবেন। ব্যবসার যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় বরং বরগুনা জেলার সকল ট্রলারের চাহিদা মোতাবেক নোঙ্গর সরবরাহ করার পরিকল্পনা তার রয়েছে এবং ছেলে মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি অত্যন্ত সচেষ্ট। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রিনারানী কর্মকারকে একনামে সবাই চিনে ও ভালবাসে। কারন তার তৈরী দ্রব্যদি অত্যন্ত টেকসই ও গুনগত মান অনেক ভাল। তার দেখাদেখি আরও কয়েজন নারী একই ধরনের পেশায় নিয়োজিত হয়েছে এবং রিনার নিকট হতে তারা বাজার ও কাচাঁমাল সংগ্রহের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা নিচ্ছে। এ কাজটি অত্যন্ত সক্ষম পুরুষের কাজ, তা তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের কঠিন কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নারীদের আরও উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়ার জন্য এবং এ ধরনের কঠিন কাজে তার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে নির্বাচিত করা আবশ্যক বলে মনে করি।