বরগুনা শহরের শহরতলীর একটি গ্রাম বাঁশবুনিয়া। গ্রামের কাছাকাছি বাঁশবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কিন্তু তারপরেও কিশোরীরা সবাই পড়াশুনা করেনা। অর্থের টান-পোড়েন আছে, আছে সামাজিক ব্যাধি-ইভটিজিং, উৎপীড়নসহ নানা অসুবিধা। সমস্যা যখন পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়ায়, তখন একটাই সিদ্ধান্ত স্কুল ছেড়ে দেওয়া। যারাওবা স্কুলে যাচ্ছে, ্এসএসসি শেষ করার আগেই বিয়ের জন্য তৎপর হয়ে যাচ্ছে মা-বাবা। পঞ্চম শ্রেণির পর খেলাধূলা একবারেই এ সমাজের ধাচে সয়না। স্কুল বিদ্যার অধিক কিছু জানার কোনো সুযোগই এই গ্রামে নেই। প্রত্যেকে নিজের ঘরে আটকে থেকে নতুন টেকনোলজির বিশ্ব থেকে প্রতিদিন অজ্ঞাত থেকে যাচ্ছে। স্কুল থেকে কিছু কিশোরী ঝরে পড়ার পর তারা পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ জীবন যাপন করছে। ফলে সমাজে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস ও শিশুশ্রম মহামারী আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বেশ কিছু কিশোরী পরিবারে সমাজে এবং সমাজের বৃহত্তর পরিসরে চরম অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফলাফল স্বরূপ নারীর প্রতি সহিংসা বেড়ে গেছে।
![](https://sangram.ngo/wp-content/uploads/2023/08/DSC06667.jpg)
সংগ্রাম বরগুনা সদর শাখার আওতায় বাঁশবুনিয়া ও এর আশেপাশে ৪টি সমিতি আছে। পরিবারের উন্নয়নের সাথে কিশোরীদের উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। কাজেই কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন ও পারস্পরিক সুরক্ষামূলক সমাজ গঠনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও কিশোরীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি রোধকল্পে সচেতনতা সৃষ্টি, যৌতুকবিরোধী সচেতনতা তৈরি, ঝরে পড়ার হার কমানো ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে বাঁশবুনিয়া গ্রামে সংগ্রামের ইউপিপি-উজ্জীবিত প্রকল্পের সদস্যদের ১৩জন কিশোরীকে নিয়ে ১৬ মে ২০১৬ তারিখে ‘উদয়ন কিশোরী ক্লাব’ গঠিত হয়। এর আগে অভিভাবক, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে কয়েক দফা মিটিং করে কিশোরী ক্লাব গঠণের বিষয়টি চুড়ান্ত করা হয়। কিশোরীরা নিজেরোই তাদের ক্লাবের নামকরণ করে ‘উদয়ন কিশোরী ক্লাব’। এই নামে তারা সাইনবোর্ড তৈরী করে তাদের ক্লাবের সামনে সেটে দিয়েছে।
![](https://sangram.ngo/wp-content/uploads/2023/08/DSC05993.jpg)
![](https://sangram.ngo/wp-content/uploads/2023/08/IMG_9662.jpg)
![](https://sangram.ngo/wp-content/uploads/2023/08/IMG_9665.jpg)
উদয়ন কিশোরী ক্লাবের কিশোরীরা সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন বিকালে ক্লাবে সমাবেত হয়। বর্তমানে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ১৯জন। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। সাপ্তাহিক ও মাসিক বৈঠকের আলোচনাসমূহ রেজুলেশনভ‚ক্ত হয়। সভায় কিশোরীরা শিক্ষণ বিনিময়, খেলাধুলা, গান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বই পড়া, কবিতা লিখন, আবৃত্তি চর্চা পরিচালনা করে। প্রোগ্রাম অফিসার (সোশ্যাল) মাসের প্রথম সপ্তাহে এক দিন ক্লাবের সভায় উপস্থিত থেকে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক সেশন পরিচালনা করেন। উদয়ন কিশোরী ক্লাবে গল্প, স্বাস্থ্য, নাটক, লেখকের জীবনী, কবিতা, কৃষি, উপন্যাস সহ ১৫০ টি বইয়ের একটি ছোট লাইব্রেরী আছে।এছাড়া খেলা করার জন্য লুডু, দাবা আছে।
ইতিমধ্যেই উদয়ন কিশোরী ক্লাব এলাকায় যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। একে অন্যের প্রতি আন্তরিকতাও তৈরী হয়েছে। সভাপ্রধান পিংকির এক ডাকেই সবাই যেকোন সময় উপস্থিত হয়।
উদয়ন কিশোরী ক্লাবের কিশোরীরা ইতিমধ্যে শিশু অধিকার, শিশু পাচার, জন্ম নিবন্ধন, জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য, নারী অধিকার, বাল্যবিবাহ, বিবাহ নিবন্ধন, যৌতুক, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, আইনি সহায়তা, মাদকাসক্তি, প্রতিবন্ধী, দুর্যোগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এইচআইভি/ এইডস ইত্যাদি বিষয়ে জানতে পেরেছে এবং সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে।