বরগুনার জেলার তালতলী উপজেলার মোমেসে পাড়া গ্রামের জন্ম-প্রতিবন্ধি মোসাম্মাৎ জেসমিন আক্তার। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। বয়স ২২ বছর। বাবার নাম মো. সেরাজুল হক। মায়ের নাম মোসাম্মাৎ মাজেদা বেগম। এক ভাই ২ বোনের মধ্যে জেসমিন দ্বিতীয়। অভাবের সংসারে জেসমিনকে অন্যদের মত ভাল রাখতে মা মাজেদা বেগম তাঁর বাবার বাড়ি থেকে অনেক কষ্টে একটি গাভী জোগার করে দিলেন জেসমিনকে ২০১১ সনে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জেসমিন গাভীটিকে লালন-পালন করে বড় করতে লাগলেন। গাভী থেকে সুবিধা পাওয়ার আশায় পাশের চামো পাড়া গ্রামের ধুরন্ধর ছগির হোসেন নিজের ২ স্ত্রীর কথা গোপন করে ২৩ অক্টোবর ২০১৩ সনে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে জেসমিনকে বিয়ে করে। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে জেসমিনের সেই গরুটি তাদের অলক্ষ্যে বিক্রি করে টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায়। অসহায় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জেসমিন ও তার মা-বাবা বড় রকমের সমস্যার মধ্যে পরে যায়। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জেসমিনের আহাজারীর কারনে তার মা তাকে পূণরায় ২টি ছাগল জোগার করে দেন। জেসমিন ছাগল পালন শুরু করে।
২০১৩ ডিসেম্বরে সংগ্রাম তালতলী এলাকায় ইউপিপি-উজ্জীবিত প্রকল্পের ফোকাস গ্রুপ ডিসকার্সনের মাধ্যমে সদস্য যাচাই-বাছাই করে প্রোফাইলের কাজ শুরু করে। মোসাম্মাৎ জেসমিন বেগমকে অতিনাজুক সদস্য হিসেবে ২৪ জানুয়ারী ২০১৪ তারিখে তালতলী শাখার আওতায় মোমেসেপাড়া মহিলা সমিতিতে ভর্তি করা হয়।
২০১৫ সনে উজ্জীবিত বরাদ্দ অনুযায়ী তালতলী শাখায় একটি অতিনাজুক সদস্যদের আইজিএ স্থাপন বাবদ অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন সমিতিতে এব্যাপারে আলোচনা হয়। মোমেসেপাড়া মহিলা সমিতিতে অতিনাজুক সদস্য হিসেবে জেসমিনকে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন প্রদর্শনী প্রদানের প্রস্তাবে সমিতির সকলে একমত হলে ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে তাকে এই প্রদর্শনীর জন্য চুড়ান্ত নির্বাচন করা হয়। ছাগলের ঘর তৈরীতে নির্দেশনা প্রদান করেন প্রোগ্রাম অফিসার টেকনিক্যাল এবং সে অনুযায়ী জেসমিন তার পরিবারের সহায়তা নিয়ে একটি মাচা পদ্ধতিতে ছাগলের ঘর তৈরী করেন। ২০ মার্চ ২০১৫ তারিখে জেসমিনের বাবা, সমিতির সভাপ্রধান, প্রোগ্রাম অফিসার টেকনিক্যাল এবং তালতলী শাখার ব্যবস্থাপক মিলে তালতলী বাজার থেকে ২টি ছাগল ক্রয় করে দেন।
শুরু হয় জেসমিনের ছাগল পালন প্রকল্প। ইউপিপি-উজ্জীবিত প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১০ থেকে ১১ জানুয়ারী ২০১৬ তারিখে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের উপর ২দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় তাকে। জেসমিন নিজে যেহেতু কথা বলতে পারে না অন্যদিকে ছাগলগুলোও কথা বরতে পারেনা। সেকারনে ছাগলের সাথে তার সখ্যতা অতি নীবিড়। সে সারাক্ষণ এই নিয়েই পড়ে থাকে। ৪ মাসের মাথায় ২টি ছাগলে ৩টি বাচ্চা হয়। একটি বাচ্চা ১৯ দিনের মাথায় মাঠে চড়ানোর সময় কুকুরে কামড়ে মেরে ফেলে। সে যেহেতু চিৎকার করতে পারেনা সেকারনে সে কারো সহযোগিতাও নিতে পারেনি। নিজ চেষ্টায় সে বাকি দুটো বাচ্চা রক্ষা করে। বর্তমানে তার ছাগল সংখ্যা ৭টি। দটো মা ছাগী বর্তমানে বাচ্চা দেওয়ার আসন্ন সময় অতিবাহিত করছে। জেসমিনের ছাগল প্রকল্পের বর্তমান অর্থমূল্য ৩৮,০০০ (আটত্রিশ হাজার) টাকা। প্রতিবন্ধি ভাতা না পেয়েও স্বাবলম্বী হওয়া যায় জেসমিন তার উজ্জ্বলদৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।