৬৫ বছরের মনোয়ারা বেগমের বাড়ি কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ গ্রামে। স্বামী মো. হোসেন মুসুল্লী প্রান্তিক কৃষক। ৩ ছেলে ১ মেয়ের সংসারে ছয় বছর আগে সমুদ্রগামী ট্রলারের মাঝি তার মেঝো ছেলে ট্রলার চালনার সময়ে মেশিনে আটকে তাৎক্ষণিক মারা যায়। সুস্থ যে ছেলে বাড়ি থেকে বেড় হয়েছিলো হঠাৎ তার মৃত দেহ দেখে তিনি মুষড়ে পরে। তার কিছুদিনের মাথায় একমাত্র জামাতা বজ্রপাতে মারা যায়। এই খরব তাকে দারুনভাবে আহত করে। দুটি ঘটনার শোকের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে সে অস্বাভাবিক হয়ে পরে। এ অবস্থা ক্রমে আরো তীব্র হয়ে এক সময় তার অবস্থা বেহাল হয়ে যায়। বস্ত্র নিজের শরীর তেকে ফেলে দেয়, পানিতে কমর সমান নেমে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে, কখনো নিখোজ হয়ে যায় এবং আরো কত কি। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং চিকিৎসার জন্য পরিবারটির সিংহভাগ জমি, বাড়ির বড় গাছ, এমনকি নিজের বসবাসের ঘরটি পর্যন্ত বেচে দিতে হয়। অসহায় হয়ে পরে পরিবারের সদস্যরা। হাল ছেড়ে দেয় সবাই। সংগ্রামের পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্প সিডিডি’র সহযোগিতায় এই এলাকায় কাজ করে। মনোয়ারার বাড়ির কাছাকাছি নীলগঞ্জ আবাসন প্রকল্পের ভিতরে গোলাপ নারী প্রতিবন্ধী স্ব-সংগঠন এই ঘটনা বেশ দেরিতেই জানতে পায়। তাদের পাক্ষিক সবায় এই ঘটনা উঠে এলে পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্পের সিডিআরপি মো. জামাল উদ্দিন মনোয়ারার স্বামী হোসেন মুসুল্লীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তারা মনোয়ারার চিকিৎসার ব্যাপারে হাপিয়ে উঠেছিলো এবং বড় ডাক্তারদের চিকিৎসায় রোগের উপশম না হওয়ায় চিকিৎসার প্রতি আস্থা হাড়িয়ে ছিলো। তাই মনোয়ারার স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার কথা উঠলে হোসেন মুসুল্লীর জামালকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়। স্থানীয় মেম্বারের সহযোগিতায় হোসেন মুসুল্লী রাজি হয়।
পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করা হলে এতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ আহমেদ চিকিৎসা দেয়। মনোয়ারা বেগমকে চিকিৎসা ক্যাম্পে অংশগ্রহন করানো হয়। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ি পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্প ঔষধ সরবরাহ করে। পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্পের সিডিআরপি মো. জামাল উদ্দিনের নিবীড় তত্ত¡াবধানে চিকিৎসা চলতে থাকে। পরিবারের সদস্য, জামাল ও মনোয়ারার পুত্রবধু শাহিদা বেগমের ১৪ মাসের চেষ্টায় বর্তমানে মনোয়ারা এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। পিএইচআরপিবিডি-ডিআই প্রকল্পের প্রতি মনোয়ারা ও তার স্বামী হোসেন মুসুল্লী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। মনোয়ারা এখন গোলাপ নারী প্রতিবন্ধী স্ব-সংগঠনের সদস্য।