সিটি গ্রুপের মানবকল্যাণমুখী সংগঠন সিটি ফাউন্ডেশন ও সিডিএফ আয়োজিত ৯ম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কারে ‘শ্রেষ্ঠ কৃষি উদ্যোক্তা’ নির্বাচিত হয়েছেন বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের মোঃ ছোমেদ ফকির। সংগ্রাম (এনজিও) থেকে তিনি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে উদ্যোগ শুরু করে বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে সাবলম্বী হয়েছেন। সেকারনে ২০১৩ সনের শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি এ পুরস্কার পান।
গতকাল রাজধানীর সোনার গাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ছোমেদ ফকিরের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় এবং পুরস্কার হিসেবে সাড়ে তিন লাখ টাকার চেক তুলে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ছোমেদ ফকির বলেন, ‘আমি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে প্রথম কৃষি খামার করি। পরে আবার ১০ হাজার টাকা নিই। এখন আমার কৃষি, কৃষিজাতদ্রব্য ও ব্যবসা এলাকার সবার কাছে পরিচিত।’
উদ্যোক্তা মোঃ ছোমেদ ফকির ৬ ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তিনি ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবা মারা যান। এ অবস্থায় তিনি পড়ালেখা ছেড়ে নদী থেকে চিংড়ী মাছের রেণু সংগ্রহকারীদের নিকট থেকে রেণু ক্রয় করে খুলনা এলাকায় বিক্রি করে আয় থেকে অতিকষ্টে সংসার পরিচালনা করতে থাকেন। পরে তিনি কয়েকটি দেশি হাঁস ক্রয় করে হাঁস পালন শুরু করেন। পরের বছর ছোট একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করেন। এতে ভাল লাভবান হওয়ায় পরবর্তীতে ৫ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করে বড় আকারে মাছ চাষ ও হাঁস পালন শুরু করেন। ২০০৬ সালে সংগ্রামের সদস্য হোন এবং ১ম দফায় ৫ হাজার এবং ২য় দফায় ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে কৃষি ও মৎস্য চাষে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সিডরে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হলে রেসকিউ ১৫০,০০০ (সিডরের কারণে পূর্ণ:বাসন প্রকল্প) টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি নতুন করে নতুন উদ্যোমে মাছ, সূর্যমূখী, ভূট্টাসহ অন্যান্য সবজী চাষ শুরু করেন। তিনি ঐ বৎসর ১লক্ষ ৬০হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেন। এর পর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর তিনি পর্যায়ক্রমে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পুকুর খনন করেন এবং পুকুরের পাড়দিয়ে ১০০টি নারকেল গাছ রোপণ করেন। এবছর তিনি সংগ্রাম থেকে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি এ অর্থ দিয়ে এবং নিজের লাভের জমানো টাকা দিয়ে গলদা চিংড়ী, দেশী ও কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, সিলভার, তেলাপিয়া, কৈ মাছের চাষ করছেন। তাছাড়া, সবজী, ধান, ভূট্টা, মরিচ ও সূর্যমূখীও চাষ করছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমান ২৫ লক্ষ ২৪ হাজার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগ্রামের ঋণ বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবির জানান, ‘ছোমেদ ফকির একজন সৃজনশীল উদ্যোক্তা, তিনি কৃষি ও মৎস্য ছাড়াও গাভী পালন, ফল চাষ, কেঁচোসার তৈরী করেন এবং স্থানীয় প্রযুক্তিতে নারিকেল তেল, সূর্যমুখী তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করেন। বর্তমানে তিনি ১৩ জন লোকের কর্মসংস্থান তৈরী করেছেন।